SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - তাপগতিবিদ্যা

Efficiency of an ideal heat engine,
η=1−T2T1[T2=temperature of the sinkT1=temperature of the source]
or, η=1−273373=100373
∴Eta=100373×100%
=26.8%.

Content added By

তাপীয় সমতা

তাপ হচ্ছে শক্তির একটি রূপ যা বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির সাথে সম্পর্কিত। দুটি বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে আনলে তাপের আদান প্রদান ঘটতে পারে। এই আদান প্রদান ঘটবে কীনা তা নির্ভর করবে বস্তুদ্বয়ের তাপীয় অবস্থার উপর।

একটি উত্তপ্ত বস্তুকে যদি খোলা জায়গায় রাখা হয় তাহলে বন্ধুটি পরিবেশে তাপ হারিয়ে শীতল হতে থাকে। আবার শীতল কোনো বস্তুকে খোলা জায়গায় রাখলে পরিবেশ থেকে তাপ গ্রহণ করে গরম হতে থাকে। কিছুক্ষণ তাপের এই আদান প্রদান চলতে থাকে। যখন আর তাপের আদান প্রদান হয় না অর্থাৎ বস্তু তাপ বর্জন করে না বা গ্রহণ করে না, আমরা তখন বলি বস্তুটি পরিবেশের সাথে তাপীয় সমতায় এসেছে। দুটি বস্তু যদি তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকে তাহলে তাদের মধ্যে তাপের আদান প্রদান হয় না। যে অবস্থায় পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা বস্তুগুলোর মধ্যে তাপের আদান প্রদান ঘটে না তাকে তাপীয় সমতা বলে। কোনো বস্তু বা সিস্টেম যদি পরিবেশের সাথে তাপীয় সমতায় থাকে, তাহলে পরিবেশের সাথে ঐ সিস্টেমের তাপের কোনো আদান প্রদান হবে না। তাপের আদান প্রদান যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা হচ্ছে বস্তু বা সিস্টেমের তাপীয় অবস্থা, যাকে বলা হয় তাপমাত্রা। তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলেই কেবল তাপের আদান প্রদান ঘটবে, তাপের পরিমাণ যাই থাকুক না কেন তাপমাত্রার পরিবর্তন না ঘটলে তাপীয় সমতা বিঘ্নিত হবে।

লক্ষ্য কর : কাপে গরম চা বা দুধ রেখে দিলে কিছুক্ষণ পর তা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ফ্রিজ থেকে বের করে ঠাণ্ডা বস্তু বা খাবার টেবিলে রাখলে কিছুক্ষণ পর গরম হয়ে যায়। আসলে কী ঠাণ্ডা বা গরম হয়।

তাপমাত্রার ধারণা

তাপমাত্রা বা উষ্ণতা হচ্ছে বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে বস্তুটিকে অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে রাখলে তাপ দেবে না নেবে। আমরা অনেক সময় হাত দিয়ে কোনো বস্তুর উষ্ণতা বুঝতে চেষ্টা করি। কিন্তু স্পর্শ দ্বারা সব সময় বস্তুর উষ্ণতা বা তাপমাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব হয় না ।

করে দেখো : ঘরের মধ্যে এক টুকরা কাঠ ও এক টুকরা লোহা কিছুক্ষণ পাশাপাশি রেখে তারপর তাদেরকে স্পর্শ কর। কী দেখলে?

লোহাকে কাঠের চেয়ে অধিকতর শীতল মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এগুলো একই পরিবেশে থাকায় তাপীয় সমতায় আছে এবং একই তাপমাত্রা বা উষ্ণতায় আছে।

পরীক্ষা : তিনটি পাত্রে পানি নাও। একটিতে বরফগলা ঠাণ্ডা পানি, একটিতে ঈষদোষ্ণ গরম পানি আর অন্যটিতে সাধারণ পানি তথা কক্ষ তাপমাত্রার পানি। এখন এক হাত ঠাণ্ডা পানিতে এবং অপর হাত গরম পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখো। এরপর উভয় হাত কক্ষ তাপমাত্রার পানিতে ডুবাও। কী অনুভব করলে?

কক্ষ তাপমাত্রার পানি তোমার ঠাণ্ডা পানিতে রাখা হাতের কাছে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এবং গরম পানিতে রাখা হাতের কাছে অপেক্ষাকৃত শীতল মনে হয়। এ থেকে বোঝা যায় শুধু স্পর্শানুভূতি দ্বারা উষ্ণতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব নয় । আবার স্পর্শ দ্বারা কোনো সময় উষ্ণতার পার্থক্য ধরা পড়লেও মান নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। যেমন কারো জ্বর হলে হাত দিয়ে স্পর্শ করে আমরা মোটামুটি বলতে পারি জ্বর এসেছে, কিন্তু জ্বরের পরিমাণ বের করা যায় না। তাই আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন হয় । উষ্ণতা বা তাপমাত্রা নির্ণয়ের এই যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার।

 

তাপমাত্রার পরিমাপ

যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় এবং বিভিন্ন বস্তুর তাপমাত্রার পার্থক্য নির্ণয় করা যায় তাকে থার্মোমিটার বলে।

থার্মোমিটার তথা উষ্ণতা পরিমাপের যন্ত্র নির্মাণে আমাদের এমন পদার্থের প্রয়োজন হয় উষ্ণতা পরিবর্তনে যার কোনো না কোনো ধর্মের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়। আমরা জানি, তাপ প্রয়োগে অর্থাৎ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাধারণত কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন বাড়ে, তড়িৎ পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়, কোনো বস্তু থেকে নির্গত আলোর বর্ণের পরিবর্তন হয়। সুতরাং বস্তু বিশেষের এ জাতীয় বিশেষ বিশেষ ধর্ম লক্ষ্য করে উষ্ণতা নির্ণয় করা যায়।

উষ্ণতার পরিবর্তনে পদার্থের যে বিশেষ বিশেষ ধর্ম নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং যে ধর্মের পরিবর্তন লক্ষ্য করে সহজ ও সুক্ষ্মভাবে উষ্ণতা নির্ণয় করা যায় তাকে উষ্ণতামিতি ধর্ম বলে। 

যে সকল পদার্থের উষ্ণতামিতি ধর্ম ব্যবহার করে থার্মোমিটার তৈরি করা হয় তাদেরকে উষ্ণতামিতি পদার্থ বলে।

বিভিন্ন পরিসরের উষ্ণতা নির্ণয়ের জন্য সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন উষ্ণতামিতি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত উষ্ণতামিতি পদার্থের বা তার ধর্মের ওপর ভিত্তি করে থার্মোমিটারের নামকরণ করা হয়। যেমন পারদ থার্মোমিটার, রোধ থার্মোমিটার, গ্যাস থার্মোমিটার প্রভৃতি ।

থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য একে দাগাঙ্কিত করতে হয়। এই দাগাঙ্কনের জন্য দুটি বিশেষ বিন্দু নির্দিষ্ট করা হয় যাদের সহজে পুনরায় উৎপন্ন করা যায়। এদের স্থির বিন্দু বলা হয়।

নিম্ন স্থির বিন্দু : যে তাপমাত্রার প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ বরফ পানির সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ গলতে শুরু করে তাকে নিম্ন স্থির বিন্দু বা বরফ বিন্দু বলে।

 

ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু : যে তাপমাত্রায় প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ পানি জলীয় বাষ্পের সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে বা যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে তাকে ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু বা স্টিম বিন্দু বলে। 

ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু ও নিম্ন স্থির বিন্দুর মধ্যবর্তী তাপমাত্রার ব্যবধানকে মৌলিক ব্যবধান বলে। এই ব্যবধানকে সুবিধাজনক কতগুলো সমান ভাগে বিভক্ত করে এক একটি ভাগকে উষ্ণতাজ্ঞাপক সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। একে বলা হয় তাপমাত্রার স্কেল।

তাপমাত্রার স্কেল নির্ধারণের সময় পদার্থের উষ্ণতামিতি ধর্ম কাজে লাগানো হয়। ধরা যাক, বরফ বিন্দু ও স্টিম বিন্দুর তাপমাত্রা যথাক্রমে θice এবং θstream এবং এই দুই তাপমাত্রায় উপরোক্ত কোনো একটি ধর্মের মান যথাক্রমে Xice এবং Xstream। এখন অন্য কোনো তাপমাত্রা θ তে ঐ ধর্মের মান যদি X θ হয় এবং মৌলিক ব্যবধানকে যদি N টি সমান ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে ঐ তাপমাত্রা   θ এর মান হবে,

θ-θiceθstream-θice =Xθ-XiceXstream-Xice

θ-θiceN=Xθ-XiceXstrem-Xice  (1.1)

বিভিন্ন স্কেলে থার্মোমিটার দাগাঙ্কিত করার জন্য (1.1) সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। তাপমাত্রার নানা প্রকার স্কেল প্রচলিত আছে। বিভিন্ন স্কেলে এই বরফ বিন্দু ও স্টিম বিন্দুর তাপমাত্রাকে বিভিন্ন ধরা হয়েছে।

Content added || updated By

সেলসিয়াস স্কেল : জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত সেলসিয়াস স্কেলে বরফ বিন্দুকে 0° এবং স্টিম বিন্দুকে 100 ধরে মধ্যবর্তী মৌলিক ব্যবধানকে 100 ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর এক এক ভাগকে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস (1°C) বলে।

 

যেহেতু সেলসিয়াস স্কেলে  θice = 0°C, θstream 100° C এবং N = θstream - θice = 100° C - 0°C = 100°C, সুতরাং সেলসিয়াস স্কেলের জন্য (1.1) সমীকরণের রূপ হলো,

θ-0°C100°C=Xθ-XiceXstream-Xice

বা, θ=Xθ-XiceXstream-Xice×100°C  (1.2) 

সেলসিয়াস স্কেলে থার্মোমিটার দাগাঙ্কনের জন্য (1.2) সমীকরণ ব্যবহার করা হয় ।

তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা পরিবর্তনের এসআই (SI) একক হচ্ছে কেলভিন ।

Content added || updated By

কেলভিন : পানির ত্রৈধ বিন্দুর তাপমাত্রার 1273.16 কে এক কেলভিন (1K) বলে। 

4.58 mm পারদস্তম্ভ চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প তাপীয় সমতায় থাকে, তাকে পানির ত্রৈধ বিন্দু বলে। পানির ত্রৈধ বিন্দুর তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে 273.16 K। এর উপর ভিত্তি করে পরম শূন্য তাপমাত্রা হচ্ছে 0K, বরফ বিন্দু 273.15 K এবং স্টিম বিন্দু 373.15 K। 

সেলসিয়াসের সাথে কেলভিনের সম্পর্ক হচ্ছে

K = C + 273.15  (1.3)

সাধারণ হিসাব নিকাশের সময় অনেক সময় বরফ বিন্দুকে 273.15 K এর পরিবর্তে 273 K ধরা হয়। তখন (1.3) সমীকরণ দাঁড়িয়,

K = C + 273

সাধারণত তাপমাত্রাকে সেলসিয়াস স্কেলে  θ এবং কেলভিন স্কেলে T দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

T= θ+273

Content added || updated By

স্বাভাবিক বায়ুচাপে ফারেনহাইট স্কেলে পানির হিমাঙ্ক কে ধরা হয় ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট (°F) এবং স্ফুটনাঙ্ক কে ধরা হয় ২১২ °F, এই দুই বিন্দুর মধ্যবর্তী অংশ কে ১৮০ ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ক্ষুদ্র ভাগকে বলা হয় ১ ডিগ্রী ফারেনহাইট।

 আবার সেলসিয়াস স্কেলে স্বাভাবিক বায়ুচাপে পানির গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্কের মধ্যবর্তী অংশ কে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি ভাগকে বলা হয় ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

 এক ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা পার্থক্য হল ৫⁄৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা পার্থক্যের সমান। আর একটি মজার বিষয় হল,−৪০ °F এবং −৪০ °C একই তাপমাত্রা নির্দেশ করে।

 ফারেনহাইট স্কেলে পরম শূন্য তাপমাত্রা হল -৪৫৯.৬৭ °F ।আবার রানকিন (Rankine scale) তাপমাত্রা পরিমাপক স্কেলে এক ডিগ্রী রানকিন (1 °R) হল, এক ডিগ্রী ফারেনহাইট এর সমান। রানকিন স্কেল এবং ফারেনহাইট স্কেলের মধ্যে পার্থক্য হল ০ °R পরম শূন্য তাপমাত্রা নির্দেশ করে, আর ৩২° F পানির হিমাঙ্ক নির্দেশ করে।..

Content added || updated By

তাপ খুব সহজেই পাওয়া যায়। যে কোনো জ্বালানি পোড়ালেই তাপ উৎপন্ন হয়। আবার একটি উষ্ণতর বস্তু ঠাণ্ডা হওয়ার সময় তাপ আপনাআপনি বেরিয়ে আসে। অন্য কোনো শক্তি তাপের ন্যায় এত সহজে মেলে না। তাই বৈজ্ঞানিকদের প্রথম প্রচেষ্টাই হলো কত বেশি পরিমাণ তাপকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় তার উপায় বের করা।

প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা কিন্তু খেয়াল খুশি মতো ঘটতে পারে না। প্রাকৃতিক প্রতিটি ঘটনাই কোনো না কোনো নিয়ম মেনে চলে। বস্তুত প্রকৃতির রাজ্য নিয়মের অধীন, সবকিছুই শৃঙ্খলা মেনে চলে। আর সেই নিয়মগুলো অপরিবর্তনীয়। যেমন পাহাড়ের ওপর থেকে পাথর গড়িয়ে নিচে পড়ে। অতীতেও এমন হয়েছে ভবিষ্যতেও হবে। কেওকারাডাং থেকেও পড়বে, হিমালয় থেকেও পড়বে। শক্তির রূপান্তরকেও কোনো না কোনো নিয়ম মেনে চলতে হয় । এই নিয়মগুলোকে বলা হয় তাপগতিবিদ্যার সূত্রাবলি। আমরা দেখেছি তাপ যান্ত্রিক শক্তি বা কাজে রূপান্তরিত হতে পারে। আজ যে পরিমাণ তাপ খরচ করে একটা কাজ পাওয়া গেল, কাল আবার সেই কাজটি করতে গেলে সেই একই পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হবে। পরিমাণের ব্যতিক্রম হতে পারবে না। বহু রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটা জানা গেছে। 

    বিজ্ঞানী জুল সর্বপ্রথম কাজ ও তাপের মধ্যে একটি সঠিক সম্পর্ক নির্ণয় করেন এবং এ সম্পর্কটি একটি সূত্রের আকারে প্রকাশ করেন। এই সূত্রকে জুলের সূত্র বলে। এই সূত্রকে তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রও বলা হয়। 

সূত্র : যান্ত্রিক শক্তি তথা কাজকে তাপে বা তাপ শক্তিকে কাজে তথা যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হলে যান্ত্রিক শক্তি ও তাপ পরস্পরের সমানুপাতিক হবে।

এই সূত্রানুসারে, WH

W=JH

এখানে W হলো কাজের পরিমাণ, H হলো তাপের পরিমাণ এবং J হচ্ছে জুলের ধ্রুবক, একে বলা হয় তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক বা সমতা। উপরিউক্ত সমীকরণে H = 1 একক হলে W = J হয়। একক তাপ উৎপন্ন করতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় বা একক তাপ দ্বারা যে পরিমাণ কাজ করা যায় তাকে তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক বা সমতা বলে।

Content added || updated By

পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় আমরা জড় জগতের খানিকটা নির্দিষ্ট অংশ বিবেচনা করি। জড় জগতের এই নির্দিষ্ট অংশকে সিস্টেম বা ব্যবস্থা বলে। সিস্টেমের বহির্ভূত সব কিছুকেই এর পরিবেশ বলে গণ্য করা হয়।

তাপগতিবিদ্যায় কিছু রাশির সাহায্যে কোনো সিস্টেমের অবস্থা বর্ণনা করা হয়। তাপগতীয় আলোচনার জন্য সাম্যাবস্থায় চাপ p, আয়তন V এবং উষ্ণতা T-এর সাহায্যে সিস্টেমকে বর্ণনা করা যায়। এই রাশিগুলোকে ভাপগতীয় স্থানাঙ্ক বলে। যে পরিবর্তনের কারণে তাপগতীয় স্থানাঙ্কের মানের পরিবর্তন হয় সেই পরিবর্তনকে তাপগতীয় প্রক্রিয়া বলে।

প্রত্যেক সিস্টেমের একটা নির্দিষ্ট আয়তন, ভর ও অভ্যন্তরীণ শক্তি থাকে। সিস্টেম বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন-উন্মুক্ত সিস্টেম, বদ্ধ সিস্টেম এবং বিচ্ছিন্ন সিস্টেম।

উন্মুক্ত সিস্টেম (Open system): যে সিস্টেম পরিবেশের সাথে ভর ও শক্তি উভয়ই বিনিময় করতে পারে তাকে উন্মুক্ত সিস্টেম বলে। বন্ধ সিস্টেম (Closed system): যে সিস্টেম পরিবেশের সাথে শুধু শক্তি বিনিময় করতে পারে কিন্তু ভর বিনিময় করতে পারে না তাকে বদ্ধ সিস্টেম বলে।

বিচ্ছিন্ন সিস্টেম (Isolated system): যে সিস্টেম পরিবেশ দ্বারা মোটেই প্রভাবিত হয় না অর্থাৎ পরিবেশের সাথে ভর বা শক্তি কোনো কিছুই বিনিময় করে না তাকে বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বলে।

Content added By

আগুনের কাছে একটি ধাতব বস্তু ধরলে দেখা যায়, সেটি বেশ গরম হয়ে ওঠেছে। আমাদের কাছে মনে হয় আগুন থেকে 'একটা কিছু' বস্তুতে এসে একে উত্তপ্ত করে তুলেছে। এই একটা কিছুই হচ্ছে তাপ।

প্রকৃতপক্ষে তাপ কোনো পদার্থ নয়, তাপ হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া যা বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন ঘটায়। প্রকৃতিতে শক্তি বিভিন্নরূপে বিরাজ করে; যেমন যান্ত্রিক শক্তি, তাপ শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, অভ্যন্তরীণ শক্তি ইত্যাদি । যান্ত্রিক শক্তি, তড়িৎ শক্তি, রাসায়নিক শক্তি প্রভৃতির প্রকৃতি সহজেই বোঝা যায় কিন্তু অভ্যন্তরীণ শক্তি বলতে আমরা কী বুঝি? যখন কোনো বস্তুকে উত্তপ্ত করা হয়, তখন এর অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এই শক্তি হ্রাস পায় যখন একে শীতল করা হয়। প্রত্যেক বস্তুর ভেতরই একটি শক্তি থাকে যার দ্বারা এটি কাজ করতে পারে। এই শক্তি অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এই শক্তিই অভ্যন্তরীণ শক্তি। প্রকৃতপক্ষে পদার্থের অণুগুলোর রৈখিক গতি, পরমাণুর কম্পন ও আবর্তন, নিউক্লিয়াসের চারদিকে ইলেকট্রনের গতির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ শক্তির উদ্ভব হয়।

প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে একটা সহজাত শক্তি নিহিত থাকে, বা কাজ সম্পাদন করতে পারে, যা অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। বস্তুর অভ্যন্তরস্থ অণু, পরমাণু ও মৌলিক কণাসমূহের রৈখিক গতি, স্পন্দন গতি ও আবর্তন গতি এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক বলের কারণে উদ্ভূত শক্তিকেই অভ্যন্তরীণ বা অন্তস্থ শক্তি বলে।

কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির মানের চেয়ে অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তি নির্ভর করে তার চাপ (p), আয়তন (V) এবং তাপমাত্রা (T) এর সাথে সাথে আরো কিছু ভৌত ধর্ম যেমন আপেক্ষিক তাপ, প্রসারণ সহগ ইত্যাদির ওপর। দুটি ভিন্ন উষ্ণতার বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে রাখলে উষ্ণতর বস্তুটি শীতল হয় এবং শীতলতর বস্তুটি উত্তপ্ত হয় এবং ক্রমান্বয়ে বস্তু দুটি একই উষ্ণতা প্রাপ্ত হয়। এরকম হলে আমরা বলি বস্তু দুটি তাপীয় সমতায় পৌঁছেছে। দুটি বস্তুর তাপীয় সমতায় পৌঁছার জন্য উষ্ণতর বস্তুটির অভ্যন্তরীণ শক্তি হ্রাস এবং শীতলতর বস্তুটির অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পায়। একটি বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে তাপ শক্তি স্থানান্তরের ফলে বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন হয়। বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন হলেই তার তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়।

Content added By

নানা রকম শক্তির মধ্যে তাপশক্তির একটা বিশেষত্ব এই যে, অন্য সব রকম শক্তি বেশ সহজেই এবং অনেক সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তাপে পরিণত হয়। যেমন পাহাড় থেকে পানি যখন প্রচণ্ড বেগে নিচে নামে তখন এর গতিশক্তি আপনা থেকেই তাপে রূপান্তরিত হয় কিন্তু তাপ সহজে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে চায় না। তাপশক্তিকে অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তরের জন্য যন্ত্রের প্রয়োজন। এই যন্ত্রই তাপ ইঞ্জিন। কার্নো তাপ ইঞ্জিনের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে সিদ্ধান্তে আসেন—ইঞ্জিন ছাড়া তাপের রূপাত্তর সম্ভব নয় এবং তাপকে সম্পূর্ণভাবে কাজে রূপান্তরিত করাও অসম্ভব। 

প্লাঙ্ক, ব্লসিয়াস, কেলভিন প্রমুখ বিজ্ঞানী নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে কার্নোর পরীক্ষালব্ধ অভিজ্ঞতাকে বিভিন্নভাবে সূত্রাকারে প্রকাশ করেছেন যা তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র নামে পরিচিত।

কার্নোর বিবৃতি : 

  কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপশক্তিকে সম্পূর্ণরূপে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরে সক্ষম এমন যন্ত্র নির্মাণ সম্ভব নয়।

প্ল্যাঙ্কের বিবৃতি : 

  এমন কোনো ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব নয়, যেটা কোনো বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করে অবিরামভাবে কাজে পরিণত করবে অথচ পরিবেশের কোনো পরিবর্তন হবে না।

ক্লসিয়াসের বিবৃতি :

  বাইরের শক্তির সাহায্য ছাড়া কোনো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের পক্ষে নিম্ন উষ্ণতার বন্ধু হতে উচ্চতর উষ্ণতার বস্তুতে তাপের স্থানান্তর করা সম্ভব নয় । কেলভিনের বিবৃতি : কোনো বস্তুকে এর পরিপার্শ্বের শীতলতম অংশ হতে অধিকতর শীতল করে শক্তির অবিরাম সরবরাহ পাওয়া সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় সূত্রের গুণগত ধারণা : 

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র থেকে আমরা জেনেছি যে, বিভিন্ন রকমের শক্তির মধ্যে রূপান্তর সম্ভব এবং কোনো শক্তির বিলোপ ঘটলে সমপরিমাণে অপর শক্তির আবির্ভাব ঘটবেই— অর্থাৎ শক্তির বিনাশ নেই । তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র প্রকৃতপক্ষে শক্তির নিত্যতা সূত্রেরই একটা বিশেষ রূপ। কিন্তু কোন্ বস্তু থেকে শক্তির রূপান্তর কোন্ দিকে হবে বা আদৌ শক্তির রূপান্তর হবে কিনা এই সূত্র থেকে তা আমরা জানতে পারি না। যেমন এক কিলোগ্রাম ভরের এক টুকরো বরফ বাইরে রেখে দিলে পরিবেশ থেকে 3.36 x 105 J তাপশক্তি বরফে এসে বরফকে পানিতে পরিণত করবে। এখানে বরফ যে পরিমাণ তাপশক্তি পাবে পরিবেশ ঠিক সেই পরিমাণ তাপশক্তি হারাবে। কিন্তু এক কিলোগ্রাম পানি যদি আমরা বাইরে রেখে দেই তাহলে ঐ পানি আপনাআপনি 3.36 x 105 J তাপশক্তি পরিবেশকে প্রদান করে বরফে পরিণত হবে না, যদিও তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র এমন পরিবর্তনকে বাধা দেয় না, কারণ শক্তির নিত্যতা সূত্র এক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে না ।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানি একটা বস্তু বা সিস্টেম যতটা তাপ হারাবে অপর সিস্টেম ঠিক সেই পরিমাণ তাপ গ্রহণ করবে। কিন্তু সেই তাপ কোন্ সিস্টেম পাবে বা হারাবে তা প্রথম সূত্র থেকে জানা যায় না। তাপের প্রবাহের দিক জানতে হলে সিস্টেম দুটির তাপমাত্রা জানা একান্ত প্রয়োজন। তাপ সর্বদা উচ্চতর তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্নতর তাপমাত্রার বস্তুর দিকে স্বাভাবিকভাবেই প্রবাহিত হবে। এর বিপরীত কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে হবে না। ঠাণ্ডা কোনো সিস্টেম থেকে তাপ আপনাআপনি বেরিয়ে গিয়ে অপর একটি উষ্ণ সিস্টেমে প্রবেশ করবে না। উষ্ণ সিস্টেমের চেয়ে শীতল সিস্টেমের তাপশক্তির পরিমাণ বেশি থাকলেও এমনটি হবে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কোনো নিম্নতর তাপমাত্রার সিস্টেম থেকে তাপ বের করে আনতে হলে তার জন্য আমাদের যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করতে হয়।

দুটি সিস্টেমের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলেই কেবলমাত্র উষ্ণতর সিস্টেম থেকে শীতল সিস্টেমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাপশক্তি প্রবাহিত হবে। এই তাপশক্তির স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহ ততক্ষণই চলবে যতক্ষণ এদের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য বজায় থাকবে।

সিস্টেম দুটির তাপমাত্রা এক হয়ে গেলে তাপের আদান প্রদানও বন্ধ হয়ে যাবে। দুটি সিস্টেমের মধ্যে তাপের আদান প্রদান বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বলি সিস্টেম দুটি তাপীয় সমতা বা সাম্যাবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনগুলো সব একমুখী এবং সাম্যাবস্থায় না আসা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। প্রকৃতিতে শক্তির রূপান্তরের দিক নিয়ে যে অভিজ্ঞতা তা থেকেই তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের উদ্ভব। কোন শক্তি কোন দিকে বা কতখানি রূপান্তরিত হবে বা কী অবস্থায় সেটি হচ্ছে তাই দ্বিতীয় সূত্রের প্রতিপাদ্য বিষয়।

Content added By

কোনো সিস্টেম যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয় তখন অবস্থার এই পরিবর্তন দু'ভাবে সংঘটিত হতে পারে। যথা: 

১. প্রত্যাবর্তী বা উভোমুখী প্রক্রিয়া (reversible process) ও 

২. অপ্রত্যাবর্তী বা একমুখী প্রক্রিয়া (irreversible process ) ।

প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া : যে প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করে এবং সম্মুখবর্তী ও বিপরীতমুখী প্রক্রিয়ার প্রতি স্তরে তাপ ও কাজের ফলাফল সমান ও বিপরীত হয় সেই প্রক্রিয়াকে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে ।

ধরা যাক, কোনো এক প্রক্রিয়ায় কোনো কার্যনির্বাহক বস্তু বিশেষ এক পরিবেশে এক অবস্থা থেকে পরিবর্তিত হয়ে অন্য অবস্থায় যাওয়ার সময় বস্তুটি দ্বারা কিছু তাপ শোষিত ও কিছু বাহ্যিক কাজ সম্পাদিত হলো। এখন এই প্রক্রিয়াকে সম্মুখবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করলে বস্তুটি যদি একই পরিবেশে বিপরীতমুখী প্রক্রিয়ায় আদি অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সময় একই পরিমাণ তাপ বর্জন করে এবং বস্তুটির ওপর একই পরিমাণ বাহ্যিক কাজ করা হয়, তাহলে সমগ্র প্রক্রিয়াকে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা যাবে।

উদাহরণ : ১. বরফ তাপ শোষণ করে পানিতে পরিণত হয়। আবার সেই পানি থেকে সমপরিমাণ তাপ অপসারণ করলে তা পুনরায় বরফে পরিণত হবে। এটি প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার একটি উদাহরণ।

২. স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে খুব ধীরে ধীরে কোনো স্প্রিং-এর দৈর্ঘ্য প্রসারণ বা সংকোচন প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার আর একটি উদাহরণ। যেহেতু সম্প্রসারণের সময় স্প্রিং-এর ওপর যে কাজ সম্পাদিত হয় সংকোচনের সময় স্প্রিংও সেই পরিমাণ কাজ সম্পাদন করে ।

অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া: যে প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না অর্থাৎ সম্মুখবর্তী ও বিপরীতমুখী প্রতি স্তরে তাপ ও কাজের ফলাফল সমান ও বিপরীত হয় না তাকে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে। 

প্রকৃতিতে যে সমস্ত পরিবর্তন বা রূপান্তর আপনাআপনি ঘটে সেগুলোকে বলা হয় স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন। স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনগুলোতে দেখা যায় যে, এগুলো সর্বদাই একটা নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত হয়। যেমন, তাপ উচ্চতর তাপমাত্রা থেকে নিম্নতর তাপমাত্রার দিকে সঞ্চালিত হয়। একটি জড়বস্তু সুযোগ পেলেই উঁচু থেকে নিচুতে পড়তে থাকে, অর্থাৎ বিভব শক্তি হ্রাস পায় । প্রকৃতিতে এসব ঘটনা কখনো স্বাভাবিকভাবে বিপরীত দিকে প্রত্যাবর্তন করে আদি অবস্থায় যায় না । নিম্ন তাপমাত্রা থেকে তাপ স্বেচ্ছায় উচ্চ তাপমাত্রায় যায় না। প্রকৃতিতে সকল স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনই একমুখী এবং অপ্রত্যাবর্তী।

উদাহরণ : দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের জন্য যে তাপ সৃষ্টি হয় তা একটি অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া। কারণ ঘর্ষণের বিরুদ্ধে যে কাজ হয় তাই তাপে পরিণত হয় এবং ঐ তাপকে কোনোভাবেই কাজে রূপান্তরিত করা যায় না।

প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার পার্থক্য

 ১। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া অতি ধীর প্রক্রিয়া। পক্ষান্তরে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া একটি দ্রুত প্রক্রিয়া।

২। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া কার্য নির্বাহী বস্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় কার্যনির্বাহী বস্তু

প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। ৩। অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও একমুখী প্রক্রিয়া কিন্তু প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত নয় ।

৪। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের তাপগতীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে। পক্ষান্তরে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের তাপগতীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে না।

Content added By
কার্যনির্বাহক বস্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে
সিস্টেমের তাপপতীয় সাম্যবস্থা বজায় থাকে
স্বতঃস্ফূর্ত ও একমুখী
অতি ধীর প্রক্রিয়া

তাপশক্তিকে কাজে পরিণত করার জন্য প্রয়োজন একটা যান্ত্রিক ব্যবস্থার। এই যান্ত্রিক ব্যবস্থাই তাপীয় বা তাপ ইঞ্জিন ।

যে যন্ত্র তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তাকে তাপ ইঞ্জিন বলে।

মূলনীতি : 

ইঞ্জিন কোনো উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করে তার খানিকটা কাজে রূপান্তরিত করবে। তাপের যেটুকু কাজে রূপান্তরিত করতে পারবে না সেটুকু পরিবেশে বিলিয়ে দেবে এবং পুনরায় উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করবে। যে উৎস থেকে ইঞ্জিন তাপ গ্রহণ করে তার তাপমাত্রা যে পরিবেশ বা সিস্টেম তাপ গ্রহণ করবে তার উষ্ণতার চেয়ে বেশি হতে হবে। অর্থাৎ ইঞ্জিনটি উচ্চতর তাপমাত্রার কোনো উৎস (source) থেকে তাপ গ্রহণ করে সেই তাপের খানিকটা কাজে পরিণত করে বাকিটা নিম্নতর তাপমাত্রার তাপগ্রাহক (sink) বা শীতল বস্তুতে ছেড়ে দিয়ে আদি অবস্থায় ফিরে আসে। ইঞ্জিন থেকে অবিরাম কাজ পাওয়ার জন্য এভাবে চক্র পরিবর্তন করা প্রয়োজন। 

চিত্র :১.৫

ধরা যাক, কোনো কার্যনির্বাহী বস্তু (যেমন, পিস্টন লাগানো সিলিন্ডারে রাখা গ্যাস) T1, উচ্চতর তাপমাত্রার তাপ উৎস (চিত্র ১.৫) থেকে Q1 পরিমাণ তাপ শোষণ করে। এখন এই ইঞ্জিন থেকে কাজ পেতে হলে অর্থাৎ এই ইঞ্জিন দ্বারা তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্য উৎস থেকে শোষিত তাপের একটা অংশ নিম্নতর তাপমাত্রার তাপগ্রাহকে বর্জন করে শীতল হতে হবে যাতে পুনরায় উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করতে পারে। T2 নিম্নতর তাপমাত্রার তাপগ্রাহকে বর্জিত তাপের পরিমাণ Q2 হলে, ইঞ্জিন দ্বারা কাজে রূপান্তরিত তাপ শক্তির পরিমাণ W = Q1 - Q2

Content added || updated By

তাপ ইঞ্জিনের সাহায্যে তাপকে কাজে রূপান্তরিত করা হয়। বাস্তবে ব্যবহৃত ইঞ্জিন সমুদয় তাপকে কাজে রূপান্তরিত করতে পারে না। সাধারণভাবে দেখা যায় ইঞ্জিন খুব বেশি হলে সরবরাহকৃত তাপশক্তির শতকরা 25 ভাগ মাত্র কাজে রূপান্তরিত করতে পারে। ফরাসি প্রকৌশলী সাদী কার্নো সকল দোষত্রুটি মুক্ত একটি আদর্শ ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করেন যা কার্নো ইঞ্জিন নামে পরিচিত।

তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য সাদী কার্নো সকল দোষত্রুটি যুক্ত যে আদর্শ যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন তাকে কার্নো ইঞ্জিন বলে।

 

চিত্র :১.৬ 

 কার্নো ইঞ্জিন একটি আদর্শ ইঞ্জিনের ধারণামাত্র, বাস্তবে এর রূপান্তর সম্ভব হয়নি। ১.৬ চিত্রে একটি কার্নো ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে।

 ১. সিলিন্ডার : 

একটি সিলিন্ডার যার দেয়াল সম্পূর্ণ তাপ অন্তরক পদার্থ এবং তলদেশ সম্পূর্ণ তাপ পরিবাহী পদার্থ দ্বারা তৈরি। এর ভেতরে সম্পূর্ণ তাপ অন্তরক পদার্থে তৈরি একটি পিস্টন P ঘর্ষণহীনভাবে চলাচল করতে পারে। সিলিন্ডারের মধ্যে কার্যনির্বাহক বস্তু হিসেবে আদর্শ গ্যাস নেয়া হয়।

২. তাপ উৎস : 

উচ্চ তাপ ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট একটি উত্তপ্ত বস্তু যা T1 তাপমাত্রায় আছে এবং তাপের উৎস হিসেবে কাজ করে । এর তাপমাত্রা সর্বদা স্থির থাকে, তাপের আদান প্রদানে কখনো পরিবর্তন হয় না।

৩. তাপ গ্ৰাহক : 

উচ্চ তাপ ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট T2 তাপমাত্রার শীতল বস্তু যা তাপগ্রাহক হিসেবে কাজ করে। এর তাপমাত্রাও সর্বদা স্থির থাকে, তাপের আদান প্রদানে কোনো পরিবর্তন হয় না । 

৪. তাপ অন্তরক আসন : 

সম্পূর্ণ তাপ অন্তরক পদার্থের তৈরি একটি আসন যার উপর সিলিন্ডারটি বসানো থাকে ।

Content added By

যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজ করে একটি আদর্শ তাপ ইঞ্জিন তথা কার্নো ইঞ্জিন অবিরাম শক্তি সরবরাহ করে আদি অবস্থায় ফিরে আসতে পারে তাকে কার্নো চক্র বলে। কার্নো চক্রে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী বস্তু উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করে একটি নির্দিষ্ট চাপ, আয়তন ও তাপমাত্রা হতে আরম্ভ করে একটি সমোষ্ণ প্রসারণ ও একটি রুদ্ধতাপীয় প্রসারণ এবং একটি সমোষ্ণ সঙ্কোচন ও একটি রুদ্ধতাপীয় সঙ্কোচনের মাধ্যমে তাপের কিছু অংশ কাজে রূপান্তরিত করে এবং বাকি অংশ তাপ গ্রাহকে বর্জন করে আদি অবস্থায় কিরে আসে।

কার্নো চক্রে কার্যনির্বাহী বস্তু অর্থাৎ আদর্শ গ্যাসকে নিম্নবর্ণিত চারটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করানো হয়।

প্রথম পর্যায় : 

   প্রথমে সিলিন্ডার C-কে তাপ উৎসের ওপর বসানো হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিলিন্ডারে আবদ্ধ গ্যাসের তাপমাত্রা উৎসের তাপমাত্রার সমান হয়। ধরা যাক, এই অবস্থায় গ্যাসের চাপ ও আয়তন যথাক্রমে P1 ও V1, যা নির্দেশক চিত্রের A বিন্দু নির্দেশ করে (চিত্র ১.৭)। এখন আদর্শ গ্যাসকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় প্রসারিত হতে দিলে প্রক্রিয়া শেষে এর চাপ ও আয়তন যথাক্রমে p2 ও V2 হবে যা ১.৭ চিত্রে B বিন্দু দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে। ১.৭ চিত্রে AB রেখা দ্বারা গ্যাসের সমোষ্ণ প্রসারণ দেখানো হয়েছে এবং এই প্রসারণের জন্য কৃতকাজ,

W1 = ABGE ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ।

দ্বিতীয় পর্যায় :

  এবার সিলিন্ডারটিকে তাপ অন্তরক আসনের ওপর বসানো হয় এবং আবদ্ধ গ্যাসকে রুদ্ধতাপীয়ভাবে প্রসারিত হতে দেয়া হয়। প্রক্রিয়া শেষে গ্যাসের চাপ ও আয়তন যথাক্রমে P3 ও V3 হয় যা ১.৭ চিত্রের C বিন্দু নির্দেশ করছে। রুদ্ধতাপীয় প্রসারণের ফলে গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। ১.৭ চিত্রে BC রেখা দ্বারা গ্যাসের রুদ্ধতাপীয় প্রসারণ দেখানো হয়েছে এবং এই প্রসারণের জন্য কৃতকাজ,

W2 = BCHG ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ।

চিত্র :১.৭

তৃতীয় পর্যায় : 

এখন সিলিন্ডারটিকে তাপগ্রাহকের ওপর বসিয়ে আবার গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি করলে পিস্টন দ্বারা গ্যাসের ওপর কাজ সম্পাদিত হবে। ফলে গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আবদ্ধ গ্যাস বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অভ্যন্তরীণ শক্তি তাপরূপে তাপগ্রাহকে বর্জন করে তাপমাত্রা তাপ গ্রাহকের সমান অর্থাৎ T2 হয়। এই অবস্থায় আবদ্ধ গ্যাসের চাপ ও আয়তন যথাক্রমে P4 ও V4 হয় যা ১.৭ চিত্রের D বিন্দু নির্দেশ করে। ১.৭ চিত্রে CD রেখা সমোষ্ণ সঙ্কোচন নির্দেশ করে এবং এই সঙ্কোচনের ফলে কৃতকাজ,

W3 = CDFH ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল।

চতুর্থ পর্যায় : 

শেষ পর্যায়ে সিলিন্ডারটিকে পুনরায় তাপ অন্তরক আসনের ওপর বসানো হয় এবং রুদ্ধতাপীয়ভাবে আবদ্ধ গ্যাসের ওপর চাপ বাড়ানো হয় । ফলে এর আয়তন হ্রাস পায়। আবদ্ধ গ্যাসের ওপর কাজ সম্পাদিত হওয়ায় এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে পুনরায় উৎসের তাপমাত্রা T1 এর সমান হয়। এই অবস্থায় গ্যাসের চাপ ও আয়তন পুনরায় যথাক্রমে P1 ও V1, হয় যা ১.৭ চিত্রের এ বিন্দু নির্দেশ করে অর্থাৎ আবদ্ধ গ্যাস আদি অবস্থায় ফিরে আসে। ১.৭ চিত্রে DA রেখা দ্বারা আবদ্ধ গ্যাসের রুদ্ধতাপীয় সঙ্কোচন দেখানো হয়েছে এবং এর ফলে কৃত কাজ,

W4 = DAEF ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল।

পূর্ণচক্রে কৃত কাজ :

কার্নোচক্রে W1 ও W2 আবদ্ধ গ্যাস দ্বারা কৃতকাজ বলে ধনাত্মক হবে এবং W3 ও W4 আবদ্ধ গ্যাসের ওপর কৃত কাজ বলে ঋণাত্মক হবে। ফলে আবদ্ধ গ্যাস দ্বারা মোট কৃতকাজ,

W= W11+ W2 - W3 - W4

= ABCD ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল।

সুতরাং একটি কার্নো চক্রে কার্যনির্বাহী বস্তু কর্তৃক সম্পাদিত মোট কাজ নির্দেশক চিত্রে দুটি সমোষ্ণ রেখা ও দুটি রুদ্ধতাপীয় রেখা কর্তৃক আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমান।

Content added || updated By

একটি ইঞ্জিন তাতে প্রদত্ত বা শোষিত তাপশক্তির কত অংশ কাজে রূপান্তরিত করতে পারে, ইঞ্জিনের দক্ষতা বা কর্মদক্ষতা বা তাপীয় দক্ষতা দ্বারা তাই বোঝায় । 

কোনো তাপ ইঞ্জিন যারা কাজে রূপান্তরিত তাপ শক্তির পরিমাণ এবং ইঞ্জিন দ্বারা শোষিত তাপশক্তির পরিমাণের অনুপাতকে ইঞ্জিনের দক্ষতা বলে।

সুতরাং ইঞ্জিনের দক্ষতা, η =ইঞ্জিন দ্বারা কাজে রূপান্তরিত তাপশক্তি/ইঞ্জিন দ্বারা শোষিত তাপশক্তি

কোনো ইঞ্জিন যদি T1; তাপমাত্রায় তাপ উৎস থেকে Q1 তাপ শোষণ করে T2 তাপমাত্রায় Q2 তাপ বর্জন করে, তাহলে ইঞ্জিন দ্বারা কাজে রূপান্তরিত তাপশক্তির পরিমাণ

W= Q1 - Q2

η=WQ1 

η=Q1 -Q2Q1 

η=1-Q2Q1..(1.28)

তাপীয় ইঞ্জিনের বেলায় ইঞ্জিন দ্বারা শোষিত বা বর্জিত তাপ Q ইঞ্জিনের সংস্পর্শে থাকা তাপ উৎস বা তাপাধারের তাপমাত্রা T এর সমানুপাতিক অর্থাৎ, QT ধ্রুব সংখ্যা। কাজেই তাপীয় ইঞ্জিনের একটি পূর্ণচক্রের জন্য আমরা পাই,

Q2Q1=T2T1..(1.29)

সুতরাং ( 1.28) সমীকরণ থেকে কার্নো ইঞ্জিনের দক্ষতা পাওয়া যাবে,

η=T1-T2T1..(1.30)

দক্ষতাকে সাধারণত শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়।

η=T1-T2T1×100%.   (1.31)

তাপীয় ইঞ্জিনের কর্ম দক্ষতার সমীকরণ (1.31 ) হতে দেখা যায় যে, ইঞ্জিনের কর্ম দক্ষতা কেবলমাত্র তাপ উৎস এবং তাপ গ্রাহকের তাপমাত্রা T1 ও T2 এর ওপর নির্ভর করে— কার্যনির্বাহী বস্তুর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। এই সমীকরণ থেকে আরো দেখা যায় যে, যে কোনো দুটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে কার্যরত সকল প্রত্যাবর্তী ইঞ্জিনের দক্ষতা সমান হবে।

(1.31) সমীকরণে যেহেতু T1 > (T1 – T2), কাজেই ইঞ্জিনের দক্ষতা কখনোই 100% হতে পারে না। তাপ উৎস এবং তাপগ্রাহকের মধ্যবর্তী তাপমাত্রার পার্থক্য যত বেশি হবে ইঞ্জিনের দক্ষতাও তত বৃদ্ধি পাবে ।

১.১৩। রেফ্রিজারেটর (Refrigerator)

রেফ্রিজারেটর ইদানিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। বিশেষ করে শহুরে জীবনে রেফ্রিজারেটর ছাড়া এক দিনও চলে না। সংক্ষেপে একে বলা হয় ফ্রিজ। ফ্রিজে খাদ্যবস্তু বা অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ, মাংস, কাঁচা ও রান্না করা তরিতরকারি এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র ইতাদি নিম্ন তামাত্রায় দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা যায়। এ তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া খাদ্যবস্তু বা অন্যান্য সামগ্রী পচিয়ে ফেলতে পারে না। ফলে অনেক দিন টাটকা ও ভালো থাকে।

রেফ্রিজারেটরের মধ্য থেকে বিশেষ উপায়ে তাপ শক্তিকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে এর মধ্যে কক্ষ তাপমাত্রা থেকে অনেক নিম্ন ( 0°C থেকে কম) তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়। আমরা জানি প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে তাপ সবসময় উচ্চতর উষ্ণতার বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুতে সঞ্চালিত হয়। উল্টোটি সাধারণত ঘটে না, অর্থাৎ শীতল বস্তু থেকে তাপ উষ্ণ বস্তুতে যায় না। উল্টোটি ঘটাতে হলে অর্থাৎ কোনো শীতল বস্তু থেকে তাপ উষ্ণ বস্তুতে সঞ্চালিত করতে হলে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করতে হয়। এ ব্যবস্থাকে বলে তাপ পাম্প (Heat pump )।

চিত্র :১.৮ তাপ পাম্পের মূলনীতি

(১) বাস্পীভবন কুণ্ডলী (২) সম্প্রসারক ভালব (৩) ঘনীভবন কুণ্ডলী (৪) সংকোচন পাম্প বা কম্প্রেসার

  মূলনীতি :

  ১.৮ চিত্রে তাপ পাম্পের মূলনীতি দেখানো হলো। একটি বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে ঠাণ্ডা তরল প্রবাহিত করা হয়। এই তরল পারিপার্শ্বিক থেকে তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়। অতঃপর তরলকে একটি সম্প্রসারক ভালবের মধ্য দিয়ে উচ্চ চাপে প্রবাহিত করে সম্প্রসারিত হতে দিলে তা বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প ঘনীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পরিবেশে তাপ বর্জন করে ঠাণ্ডা হয়। এরপর এই ঠাণ্ডা বাষ্পকে কম্প্রেসারের মধ্যে প্রবল চাপে সংকুচিত করে তরলে রূপান্তরিত করে পুনরায় বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়।

কম্প্রেসার চালনায় এবং বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত করার জন্য যান্ত্রিক শক্তি কাজে লাগানো হয়। রেফ্রিজারেটরেও এভাবে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করে তাপ শক্তি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নিচে রেফ্রিজারেটরের গঠন ও কার্যনীতি বর্ণনা করা হলো।

গঠন: 

রেফ্রিজারেটরের প্রধান অংশ একটি আয়তাকার শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ (চিত্র ১.৯)। যার চারদিকে তাপ সুপরিবাহী ধাতব নলের কুণ্ডলী পেঁচানো থাকে। কুণ্ডলীটির এক প্রাপ্ত রেফিজারেটরের নিচে রক্ষিত একটি কম্প্রেসারের অন্তর্গামী প্রান্তের সাথে এবং অন্য প্রান্ত একটি সম্প্রসারক ভালবের মাধ্যমে দ্বিতীয় একটি নল কুণ্ডলীর সাথে যুক্ত থাকে।

দ্বিতীয় নল কুণ্ডলীটিকে ঘনীভবন কুণ্ডলী বলে। এটি রেফ্রিজারেটরের পেছনে একটি ফিনসের উপর বসানো থাকে এবং কুণ্ডলীর নলের শেষ প্রান্ত একটি সংকোচন পাম্প বা কম্প্রেসারের বহির্গামী প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।

চিত্র : ১.৯ রেফ্রিজারেটরের গঠন ও কার্যপ্রণালী

উভয় কুণ্ডলীর নলের মধ্য দিয়ে বিশেষ ধরনের শীতায়ক (refrigerent) পদার্থ চালনা করা হয়। শীতায়ক পদার্থটির বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ চাপে নলের মধ্য দিয়ে চালিত হলে পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করে এবং দ্রুত বাষ্পে পরিণত হতে পারে। কম্প্রেসারটি একটি বৈদ্যুতিক পাম্প দ্বারা চালানো হয়।

কার্যপ্রণালি : 

কম্প্রেসারটি চালু করলে বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্যে চাপ কমে যাওয়ায় শীতায়ক তরল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। এজন্য সুপ্ত তাপ প্রয়োজন হয়। শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ বা রেফ্রিজারেটরের মধ্যে রক্ষিত বস্তু থেকে এই সুপ্ততাপ শোষণ করে তরল শীতায়ক বাষ্পে বা গ্যাসে পরিণত হয়। ফলে প্রকোষ্ঠের ভেতরে নিম্ন তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়।

গ্যাসীয় শীতায়ক পদার্থ কম্প্রেসার বা সংকোচন পাম্পের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাম্প উচ্চ চাপে শীতায়ক গ্যাসকে সংকুচিত করে ঘনীভবন কুণ্ডলীতে চালনা করে। বাইরে উন্মুক্ত এই কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে (ফ্রিজের পেছনে পাখার উপর এ ধরনের কুণ্ডলী দেখা যায়) উচ্চ চাপের সংকুচিত গ্যাস প্রবাহিত হয়। বাইরের বায়ুমণ্ডলে তাপ বর্জন করে এবং তরল হয়। এই তরল পুনরায় বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এভাবে যতোক্ষণ কম্প্রেসারটি চালু থাকে ঘনীভবন এবং বাষ্পায়ন চক্রটিও ক্রমাগত চলতে থাকে। ফলে ফ্রিজের মধ্যে নিম্ন তাপমাত্রা বজায় থাকে। শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ প্রয়োজনের বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কম্প্রেসারটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয়। এজন্য রেফ্রিজারেটরের মধ্যে একটি স্বয়ংক্রিয় সুইচ থাকে। যাকে বলা হয় থার্মোস্ট্যাট। তাপমাত্রা কমে গেলে সুইচটি আপনাআপনি চালু হয় ।

Content added || updated By

তাপ গতিবিদ্যার প্রথম সূত্র প্রকৃতপক্ষে শক্তির নিত্যতা সূত্রেরই একটি বিবৃতি। বিজ্ঞানী ক্লসিয়াস এই সূত্রকে সাধারণ রূপে বর্ণনা করেন। তাঁর মতে, কোনো সিস্টেমে তাপ শক্তি অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত হলে অথবা অন্য কোনো শক্তি তাপে রূপান্তরিত হলে সিস্টেমের মোট শক্তির পরিমাণ একই থাকে ।

সূত্র : যখন কোনো সিস্টেমে তাপশক্তি সরবরাহ করা হয় তখন সেই তাপশক্তির কিছু অংশ সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং বাকি অংশ দ্বারা সিস্টেম তার পরিবেশের ওপর বাহ্যিক কাজ সম্পাদন করে।

Q পরিমাণ তাপশক্তি সরবরাহ করার ফলে যদি কোনো সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন U এবং সিস্টেম

কর্তৃক পরিবেশের ওপর বাহ্যিক কৃতকাজের পরিমাণ W হয়, তাহলে

Q =U +  W... (1.9)

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিবর্তনের সময় এই সমীকরণকে লেখা যায়,

dQ = dU +dW….. (1.10)

 এখানে Q বা dQ ধনাত্মক ধরা হবে যদি সিস্টেমে তাপ সরবরাহ করা হয়। পক্ষান্তরে তাপশক্তি যদি সিস্টেম থেকে পরিবেশে যায় তাহলে  Q বা dQ ঋণাত্মক হবে। সিস্টেম কর্তৃক পরিবেশের ওপর কাজ সম্পাদিত হলে  W বা dW ধনাত্মক হবে এবং পরিবেশ সিস্টেমের ওপর কাজ সম্পাদন করলে  W বা dW ঋণাত্মক হবে। সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পেলে  U বা dU ধনাত্মক হবে আর সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি হ্রাস পেলে  U বা dU ঋণাত্মক হবে । তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র ব্যবহারে চিহ্ন সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

(1.10) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে,

dU =dQ - dW

অর্থাৎ কোনো সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন হচ্ছে সিস্টেমে যে পরিমাণ শক্তি তাপ হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে এবং যে পরিমাণ শক্তি কাজ হিসেবে সিস্টেম থেকে পরিবেশে যাচ্ছে তার পার্থক্যের সমান।

Content added || updated By

সমচাপ প্রক্রিয়া

যে তাপগতীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের চাপের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে সমচাপ প্রক্রিয়া বলে।

চিত্র :১.১

ধরা যাক, ঘর্ষণহীন পিস্টন সংযুক্ত কোনো সিলিন্ডারের মধ্যে কিছু গ্যাস আবদ্ধ আছে (চিত্র ১-১)। পিস্টনের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A গ্যাসের চাপ p হলে পিস্টনের ওপর গ্যাসের চাপজনিত মোট বলের পরিমাণ হবে pA। এখন এই বলের সমান একটি বাহ্যিক বল F পিস্টনের ওপর ক্রিয়াশীল হলে পিস্টনটি সাম্যাবস্থায় থাকবে।

এখন ধরা যাক, গ্যাস প্রসারিত হয়ে পিস্টনটিকে বাইরের দিকে খুব ক্ষুদ্র দূরত্ব dx পরিমাণ সরিয়ে নিল। dx খুব ক্ষুদ্র হওয়ায় গ্যাসের চাপ অপরিবর্তনশীল বিবেচনা করা যায়। F বলের বিরুদ্ধে বাহ্যিক কাজের পরিমাণ dw হলে,

dW = Fdx = p A dx

:- dw = p dv

এখানে dV = A dx = গ্যাসের আয়তনের ক্ষুদ্র প্রসারণ।

স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন V1 থেকে V2-তে পরিবর্তিত হলে গ্যাস কর্তৃক মোট কৃত কাজ,

W= p (V2-V1)

অর্থাৎ কৃত কাজ = চাপ x আয়তনের পরিবর্তন

(1.10) সমীকরণে কাজের মান বসিয়ে তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রকে লেখা যায়,

dQ = dU + p dv

নির্দেশক চিত্র (Indicator Diagram)

সাধারণভাবে যে কোনো তাপগতীয় প্রক্রিয়ায় কৃতকাজের পরিমাণ pV রৈখিক চিত্র-এর সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। এই রৈখিক চিত্রকে নির্দেশক চিত্র বলে। X অক্ষে আয়তন V এবং Y অক্ষে চাপ p নিয়ে নির্দেশক চিত্র বা pV রৈখিক চিত্র অঙ্কন করা হয়।

চিত্র :১.২

যদি গ্যাসের চাপ এর আয়তনের সাথে পরিবর্তিত হয় তাহলে নির্দেশক চিত্রের রূপ চিত্র ১.২-এর ন্যায় হবে। গ্যাসের এই পরিবর্তনের জন্য কৃতকাজের পরিমাণ নির্দেশক চিত্রের aABb ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমান হবে।

(খ) সমোষ্ণ প্রক্রিয়া (Isothermal Process)

যে প্রক্রিয়ায় কোনো সিস্টেমের তাপমাত্রা স্থির থাকে যাতে করে বয়েলের সূত্র প্রয়োগ করা যায় তাকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে। 

যে তাপগতীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের তাপমাত্রা স্থির থাকে তাকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে।

ধরা যাক, আমাদের সিস্টেম হচ্ছে একটি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার যার সাথে একটি নড়নক্ষম পিস্টন লাগানো আছে। সিলিন্ডারের দেয়ালের মধ্য দিয়ে সিস্টেমে তাপ প্রবেশ করতে কিংবা সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

যদি সিস্টেমে খুব ধীরে ধীরে তাপ সরবরাহ করা যায় তাহলে গ্যাসের চাপ ও আয়তনের পরিবর্তন হবে যদিও এর তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন হবে না। এরূপ পরিবর্তনকে সমোষ্ণ পরিবর্তন বলা হয়। এর ফলে গ্যাসের যে প্রসারণ হয় তাকে সমোষ্ণ প্রসারণ বলে।

চিত্র :১.৩

সমোষ্ণ প্রক্রিয়ার pV রৈখিক চিত্র ১.৩ চিত্রে দেখানো হয়েছে। এই রৈখিক চিত্রকে সমোষ্ণরেখ বলে।

 সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় উষ্ণতা স্থির থাকে বলে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তির কোনো পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ dU = 0। 

 সুতরাং তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র থেকে আমরা পাই,

dQ=0+dW

:- dW= dQ.. ..  (1.14)

অর্থাৎ সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় কোনো সিস্টেম কর্তৃক কৃতকাজ সিস্টেমে সরবরাহকৃত তাপশক্তির সমান। সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায়

P1V1 = P2V2 হবে ।

(গ) রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া (Adiabatic Process)

যে প্রক্রিয়ার সিস্টেম থেকে তাপ বাইরে যায় না বা বাইরে থেকে কোনো তাপ সিস্টেমে আসে না তাকে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া বলে।

সিস্টেমটিকে পরিবেশ থেকে তাপীয়ভাবে অন্তরিত করে অথবা গ্যাসকে দ্রুত প্রসারিত অথবা সঙ্কুচিত করলে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া পাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের যে পরিবর্তন হয় তাকে রুদ্ধতাপীয় পরিবর্তন বলে। এর ফলে গ্যাসের যে প্রসারণ হয় তাকে রুদ্ধতাপীয় প্রসারণ, আর গ্যাস সঙ্কুচিত হলে তাকে রুদ্ধতাপীয় সঙ্কোচন বলে। যেহেতু রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেমে কোনো তাপ প্রবেশ করতে পারে না বা সিস্টেম থেকে কোনো তাপ বেরিয়ে যেতে পারে না সুতরাং dQ = 0 । অতএব, তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র থেকে আমরা পাই,

0 = dU+dW

:. dw=-dU  ... (1.15)

চিত্র : ১.৪

রুদ্ধতাপীয় প্রসারণের সময় সিস্টেম কর্তৃক সম্পাদিত কাজ সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি দ্বারা সম্পাদিত হয় বলে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি তথা তাপমাত্রা হ্রাস পায় অর্থাৎ সিস্টেম শীতল হয়। পক্ষান্তরে রুদ্ধতাপীয় সঙ্কোচনের সময় বাইরে থেকে শক্তি সরবরাহ করে সিস্টেমের ওপর কাজ সম্পাদিত হয় বলে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে সিস্টেমের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়।

সুতরাং রুদ্ধতাপীয় প্রসারণে সিস্টেম শীতল হয় আর রুদ্ধতাপীয় সঙ্কোচনে সিস্টেম উষ্ণ হয়।

১.৪ চিত্রে কোনো আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে T1এবং T2 তাপমাত্রার জন্য দুটি সমোষ্ণ রেখা দেখানো হয়েছে। গ্যাসের আদি তাপমাত্রা T1 এবং আদি আয়তন V1 ফলে T1 সমোষ্ণ রেখার ওপর এ বিন্দু দ্বারা এর অবস্থা (অর্থাৎ চিত্র : ১.৪ P1,  V1, T1) সূচিত হয়েছে। গ্যাসটি রুদ্ধতাপীয়ভাবে প্রসারিত হয়ে V2 আয়তন প্রাপ্ত হলে এর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে T2 হয় এবং T2 সমোষ্ণ রেখার ওপর B বিন্দু দ্বারা এর অবস্থা (অর্থাৎ P2, V2, T2 ) নির্দেশ করা হয়। A ও B বিন্দুর মধ্য দিয়ে অঙ্কিত নিরেট রেখাটি দ্বারা রুদ্ধতাপীয় পরিবর্তনের জন্য গ্যাসটির চাপ ও আয়তনকে সম্পর্কিত করা হয়। এই রেখাকে রুদ্ধতাপ রেখা বলে। ১.৪ চিত্রে দেখা যায় যে, সমোষ্ণ রেখার চেয়ে রুদ্ধতাপীয় রেখা বেশি খাড়া।

গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ বা মোলার তাপীয় ক্ষমতা

মোলার আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা: কোনো পদার্থের এক মোলের উষ্ণতা এক কেলভিন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় তাপকে ঐ পদার্থের মোলার আপেক্ষিক তাপ বা মোলার তাপীয় ক্ষমতা বলে। 

কোনো পদার্থের m মোলের তাপমাত্রা T কেলভিন বৃদ্ধি করতে যদি Q জুল তাপশক্তির প্রয়োজন হয় তাহলে ঐ পদার্থের মোলার আপেক্ষিক তাপ,

C=QmT

একক: মোলার আপেক্ষিক তাপের একক : J (mol)-1 K-1

তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য পদার্থের চাপ এবং আয়তনের পরিবর্তন ঘটে। কঠিন ও তরল পদার্থের জন্য এই পরিবর্তন নগণ্য হওয়ায় তা উপেক্ষা করা যায়। গ্যাসের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য চাপ ও আয়তনের পরিবর্তন অনেক বেশি হওয়ার জন্য গ্যাসের আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা দেয়ার সময় চাপ ও আয়তনের শর্ত নির্দিষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন। দুটি ক্ষেত্রের প্রতি আমরা বিশেষভাবে আগ্রহী : (i) যখন চাপ স্থির থাকে এবং (ii) যখন আয়তন স্থির থাকে ।

স্থির চাপে গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ, Cp : চাপ স্থির রেখে এক মোল গ্যাসের তাপমাত্রা এক কেলভিন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় তাপশক্তিকে স্থির চাপে গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ, Cp, বলে । 

চাপ স্থির রেখে m মোল গ্যাসের তাপমাত্রা T কেলভিন বৃদ্ধি করতে যদি Q জুল তাপশক্তির প্রয়োজন হয় তাহলে স্থির চাপে ঐ গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ,

Cp=QmT

স্থির আয়তনে গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ, Cv: আয়তন স্থির রেখে কোনো গ্যাসের এক মোলের তাপমাত্রা এক কেলভিন বাড়াতে প্রয়োজনীয় তাপশক্তিকে স্থির আয়তনে গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ, Cv বলে।

আয়তন স্থির রেখে m মোল গ্যাসের তাপমাত্রা   T কেলভিন বৃদ্ধি করতে যদি  Q জুল তাপশক্তির প্রয়োজন হয় তাহলে স্থির আয়তনে ঐ গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ,

Cv=QmT

Content added || updated By
Please, contribute to add content into ..
Content
মোট তাপ
সুশৃঙ্খলতা
বিশৃঙ্খলতা
তাপমাত্রা

আমরা এখন একটি নতুন ধারণার অবতারণা করব যা এন্ট্রপি নামে পরিচিত এবং যা বিজ্ঞানের আলোচনায় মৌলিক গুরুত্ববহ একটি রাশি। কোনো সিস্টেমে শক্তি থাকলেই যে তাকে প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই । এটা নির্ভর করে সিস্টেমের তাৎক্ষণিক অবস্থার ওপরে। নিচের উদাহরণ দ্বারা বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা যাক। ধরা যাক, দুটি পানিপূর্ণ পাত্র নিয়ে একটা সিস্টেম। একটি পাত্রে 90°C উষ্ণতার 5 kg পানি এবং অন্য পাত্রে 10°C উষ্ণতার 5 kg পানি আছে। এখন 90°C উষ্ণতার পাত্রটিকে তাপ উৎস এবং 10°C উষ্ণতার পাত্রটিকে তাপগ্রাহক ধরে আমরা একটা ইঞ্জিন চালু করতে পারি। পাত্র দুটি একই তাপমাত্রায় না পৌঁছা পর্যন্ত এই সিস্টেম হতে বেশ কিছু পরিমাণ কাজ পেতে পারি। কিন্তু এখন যদি আমরা পাত্র দুটির পানি মিশিয়ে দেই তাহলে আমরা 50°C উষ্ণতার 10 kg পানি পাব, কিন্তু এই পানি থেকে ইঞ্জিন কোনো কাজ পেতে আর সক্ষম হবে না, কারণ পাত্র দুটির পানির উষ্ণতার পার্থক্য না থাকায় তাপের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র অনুসারে পাত্র দুটির পানির মোট শক্তির পরিমাণ মেশানোর পূর্বে ও পরে একই থাকলেও মেশানোর পরে সিস্টেমটি সাম্যাবস্থায় পৌঁছে যাওয়ায় এটি আর তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারবে না। কোনো সিস্টেমের শক্তির রূপান্তরের অক্ষমতাকে এনট্রপি বলে ।

আমরা জানি, কোনো গ্যাসকে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় সঙ্কুচিত করলে গ্যাসের ওপর কৃতকাজ গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে । আবার রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসকে প্রসারিত হতে দিলে গ্যাসকে কিছু কাজ করতে হয়। ফলে গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও তাপমাত্রা কমে যায়। সুতরাং দেখা যায় যে, রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও তাপমাত্রা উভয়েরই পরিবর্তন হয়। কিন্তু সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় যেমন তাপমাত্রা স্থির থাকে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় তেমনি কোনো একটি রাশি স্থির থাকে। ক্লসিয়াস এই রাশিটির নাম দেন এনট্রপি । এনট্রপি একটি ভৌত রাশি, একে S দ্বারা সূচিত করা হয় ।

কোনো সিস্টেমের শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা বা অসম্ভাব্যতাকে বা রূপান্তরের জন্য শক্তির অপ্রাপ্ততাকে এনট্রপি বলে। কোনো বস্তুর এনট্রপির পরম মান আজও জানা সম্ভব হয়নি। তবে কোনো বস্তু যদি তাপ গ্রহণ অথবা বর্জন করে,

তাহলে বস্তুর এনট্রপির পরিবর্তন হয়। কোনো সিস্টেমের তাপমাত্রার সাপেক্ষে গৃহীত বা বর্জিত তাপ পরিবর্তনের সিস্টেমের তাপমাত্রার হার দ্বারা এনট্রপির পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। যদি কোনো সিস্টেমের 7 তাপমাত্রায় dQ পরিমাণ তাপ গ্রহণ বা বর্জন করার ফলে এনট্রপির পরিবর্তন ds হয় তাহলে,

dS=dQT.. (1.32)

রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় যেহেতু কার্যনির্বাহী বস্তুর সাথে বাইরের তাপের কোনো আদান প্রদান হয় না, কাজেই   dQ= 0,

সুতরাং সমীকরণ (1.32) থেকে দেখা যায় যে, এনট্রপির পরিবর্তন, dS=dQT= 0..  (1.33)

অর্থাৎ রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় এনট্রপির কোনো পরিবর্তন হয় না।

সুতরাং কোনো বস্তুর এনট্রপি বলতে আমরা এমন একটা ভৌত রাশিকে বুঝি যা বস্তুর রুদ্ধতাপীয় প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় সর্বদা স্থির থাকে।

 (1.32) সমীকরণ থেকে আমরা পাই, এনট্রপি বা এনট্রপি পরিবর্তনের একক জুল/কেলভিন বা JK-1

প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় এনট্রপির পরিবর্তন

(ক) প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার এনট্রপির পরিবর্তন : কার্নোচক্র একটি প্রত্যাবর্তী চক্র।

১.১০ চিত্রে ABCD একটি কার্নোচক্র। কার্নোচক্র থেকে দেখা যায় যে, AB একটি সমোষ্ণ সম্প্রসারণ রেখা এবং CD একটি সমোষ্ণ সঙ্কোচন রেখা। আবার BC একটি রুদ্ধতাপীয় সম্প্রসারণ রেখা ও DA একটি রুদ্ধতাপীয় সঙ্কোচন রেখা। রুদ্ধতাপীয় রেখা বলে BC ও DA বরাবর তাপের কোনো পরিবর্তন হয় না।

চিত্র :১.১০

AB সমোষ্ণ রেখা বরাবর এনট্রপির পরিবর্তন = Q1T1

CD সমোষ্ণ রেখা বরাবর এনট্রপির পরিবর্তন = Q2T2

: কার্য নির্বাহী বস্তুর মোট এনট্রপির পরিবর্তন =  Q1T1 -  Q2T2... (1.34) 

 কিন্তু কার্নো চক্রে,  Q1T1=  Q2T2

:-মোট এনট্রপির পরিবর্তন ds =  Q1T1 -  Q2T2= 0..  (1.35)

অর্থাৎ প্রত্যাবর্তী চক্রে এনট্রপি স্থির থাকে।

 

(খ) অপ্ৰত্যাবৰ্তী প্রক্রিয়ার এনট্রপির পরিবর্তন

আবার অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় এনট্রপি স্থির থাকে না। ধরা যাক, দুটি বস্তু পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পরস্পরের সংস্পর্শে আছে। বস্তু দুটির তাপমাত্রা যথাক্রমে T1 ও T2 । যদি T1 > T2 হয় তাহলে উত্তপ্ত বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে তাপ সঞ্চালিত হবে। ধরা যাক, খুব অল্প সময়ের মধ্যে dQ পরিমাণ তাপ উত্তপ্ত বস্তু হতে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হলো। অর্থাৎ উত্তপ্ত বস্তু dQ পরিমাণ তাপ হারাল এবং শীতল বস্তু dQ পরিমাণ তাপ লাভ করল।

সুতরাং - dQT1 =উত্তপ্ত বস্তুর এনট্রপি হ্রাস এবং dQT2  =শীতল বস্তুর এনট্রপি বৃদ্ধি

সুতরাং তাপ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাপ প্রবাহের দিক এমন হবে যেন এনট্রপি বৃদ্ধি পায় । প্রকৃতিতে সবকিছুই সাম্যাবস্থা পেতে চেষ্টা করে। একটি সিস্টেম যতই সাম্যাবস্থার দিকে এগিয়ে যায় ততই তার কাছ থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, সাম্যাবস্থায় পৌঁছলে সিস্টেম থেকে আর কোনো কাজই পাওয়া যাবে না। সিস্টেমের এই শক্তির রূপান্তরের অক্ষমতা বা অসম্ভাব্যতাই হচ্ছে এনট্রপি। এক বা একাধিক সিস্টেম যত সাম্যাবস্থার দিকে এগিয়ে যায় তাদের এনপিও তত বাড়তে থাকে। সাম্যাবস্থায় এন্ট্রপি সবচেয়ে বেশি হয়। অর্থাৎ যখন কোনো সিস্টেম থেকে আর কাজ পাওয়া যায় না তখন তার এনটুপি হয় সর্বাধিক। আমরা আগেই দেখেছি যে সকল স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন সর্বদা সাম্যাবস্থার দিকে পরিচালিত হয়। সুতরাং সকল স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনেই এনট্রপি বৃদ্ধি পায়। যেহেতু প্রকৃতিতে সবকিছুই সাম্যাবস্থা পেতে চায়, তাই বলা যায় যে, জগতে এন্ট্রপি ক্রমাগত বাড়ছে। জগতের এনট্রপি যখন সর্বোচ্চে পৌঁছাবে তখন সব কিছুর তাপমাত্রা এক হয়ে যাবে। ফলে তাপশক্তিকে আর যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা  যাবে না।

 এই অবস্থাকে জগতের তথাকথিত তাপীয় মৃত্যু (heat death of the universe) নামে অভিহিত করা হয়েছে।

 

এনট্রপি ও বিশৃঙ্খলা

এনট্রপি ও বিশৃঙ্খলা ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। কোনো সিস্টেমের এনট্রপি বাড়ার সাথে সাথে সেখান থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তেমনি সিস্টেমের বিশৃঙ্খলাও বৃদ্ধি পায়। উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে। একটা গ্লাসে খানিকটা লবণ রেখে তাতে যদি পানি মেশানো হয় তবে লবণ পানিতে গুলে যেতে থাকবে এবং লবণের অণু বা তার আয়নগুলো পানির মধ্যে চারদিকে এলোমেলো ছড়িয়ে পড়তে থাকবে। কঠিন অবস্থায় লবণের মধ্যে আয়নগুলো সুশৃঙ্খলভাবে একটা বিশেষ সজ্জায় বিন্যস্ত থাকে। যদিও লবণ ভারী তবুও গুলে গিয়ে সেটা নিচে পৃথক না থেকে যতোটা সম্ভব বিশৃঙ্খলভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লবণ যখন দ্রবণের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তখন আমরা বলে থাকি দ্রবণটি সাম্যাবস্থায় এসেছে। সাম্যাবস্থায় আসলে সিস্টেমের অণুগুলো চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রাপ্ত হয় । এনট্রপিকে তাই বলা হয় সিস্টেমের বিশৃঙ্খলতার মাপকাঠি।

কোনো সিস্টেমের উপর বাইরে থেকে শক্তি প্রয়োগ করে যদি শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হয় তাহলে সিস্টেমের এনট্রপি কমে যাবে । বস্তু যখন কেলাসিত অবস্থায় থাকে তখন অণুগুলো সুসংবদ্ধ সুশৃঙ্খল সমাবেশে থাকে, সেই কারণে কঠিন অবস্থায় বস্তুর এনট্রপি খুব কম। একে সৈন্যদের প্যারেড করা বা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসে লেকচার শোনার সাথে তুলনা করা চলে। সুশৃঙ্খল প্যারেডের সময় বা ক্লাসে লেকচার শোনার সময় এনট্রপি হবে কম। প্যারেড শেষে সৈন্যরা যেমন ছড়িয়ে পড়ে বা ঘণ্টা পড়লে শিক্ষক ক্লাস থেকে চলে গেলে শিক্ষার্থীরা যেমন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে তখন এনট্রপি বেড়ে যায় ।

Content added || updated By